সালটা মনে নেই। মনে নেই তারিখ, বার কিংবা ঘড়ির কাঁটার তখনকার স্থিরাবস্থার সময়টুকু। তবে মনে আছে, স্কুল মাঠে দাপিয়ে ফুটবল খেলে বাড়ি আসার পথে বাজারে এসে থমকে গিয়েছিলাম। থমকে গিয়েছিলাম উৎসুক মানুষের জটলা দেখে। একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে অনেকগুলো মানুষ চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে একটা ছোট্ট বাক্স সদৃশ যন্ত্রের দিকে। সেই যন্ত্রের নাম টেলিভিশন। মানুষগুলোর চোখে রাজ্যের বিস্ময়! চেহারায় বিজয়ীর ভাব! কিন্তু, এটা তো কোন যুদ্ধক্ষেত্র নয়। নয় কোন উত্তপ্ত রাজনীতির মঞ্চও। শিক্ষিতরা খুব একটা এদিকটা মাড়ায় না সহজে। তাহলে, কি নিয়ে সবার মাঝে এমন কৌতূহল? কোন সে ব্যাপার যা ঘিরে এতোগুলো 'সাধারণ' মানুষ রীতিমত বিস্ময়াবিষ্ট? কার বিজয়ে তারাও বিজয়ী? কাকে দেখে মানুষগুলোর চোখমুখ এমন গভীর আবেগ, অকৃত্রিম ভালোবাসা আর অপরিসীম শ্রদ্ধায় ভর্তি?
মানুষটা লিকলিকে। চোখেও লিকলিকে একটা চশমা। দেখলে মনে হবে এই লোক বাতাসের সাথে উড়ে যাবে যখন-তখন। কিন্তু না। লোকটা বাতাসের সাথে উড়ে যায় না। তবে, লোকটার রয়েছে বিপক্ষের বিতার্কিকদের উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা। ফুঁ দিয়ে নয়। যুক্তি দিয়ে। প্রমাণ দিয়ে। দলিল দিয়ে। মনে হয় লোকটার এই ক্ষমতা যেন খুব সহজাত। এই ক্ষমতা যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা খুব অনুগ্রহ করে তার মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। এই ক্ষমতার কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে কতো মহা মহা ব্যক্তি! কতো বিদগ্ধ পন্ডিত তার আসর থেকে পরাজিত হয়ে ফিরে গেছে। তার পান্ডিত্যের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছে কতো ক্ষুধিতপাষাণ প্রাণ!
শুধু কি তাই? তার ডাকে সাড়া দিয়ে নীড়ে ফিরেছে কতো পথহারা পথিক! কতো তৃষিত হৃদয় খুঁজে পেয়েছে জীবনের অমৃত সুধা। তার নির্দেশনায় বন্দরে নোঙর করেছে কতো পথ ভুলে যাওয়া জাহাজের নাবিক।
আমি কি ভুলতে পারি শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সেই পরাজিত চেহারার কথা? আমি কি ভুলে যেতে পারি উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সেই সকরুণ চাহনি? আমি ভুলতে পারিনা।
আমি আরো ভুলতে পারিনা হাজারো মানুষের আত্মসমর্পের দৃশ্য যখন তারা 'লা ইলাহা ইল্লাললাহ' বলে বরণ করে নিয়েছিলো এক মহামহিম সত্যকে। মানুষগুলো যখন প্রকাশ্যে কালেমা পড়তো, যখন উৎসুক জনতা গভীর আবেগে তাদের অভিবাদন জানাতো, যখন তারা বলতো, 'লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ', তখন পৃথিবীর কোন এক সুদূর তল্লাটে বসে আমিও কেঁদে ফেলতাম। বারবার ভারি হয়ে যেতো চোখ। গর্বে! আনন্দে!
আমি আরো ভুলতে পারিনা হাজারো মানুষের আত্মসমর্পের দৃশ্য যখন তারা 'লা ইলাহা ইল্লাললাহ' বলে বরণ করে নিয়েছিলো এক মহামহিম সত্যকে। মানুষগুলো যখন প্রকাশ্যে কালেমা পড়তো, যখন উৎসুক জনতা গভীর আবেগে তাদের অভিবাদন জানাতো, যখন তারা বলতো, 'লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ', তখন পৃথিবীর কোন এক সুদূর তল্লাটে বসে আমিও কেঁদে ফেলতাম। বারবার ভারি হয়ে যেতো চোখ। গর্বে! আনন্দে!
সেই মানুষটার কথাই বলছি, যার হাত ধরে আমার দ্বীনে আসা। যাকে দেখেই প্রথম দ্বীন শিখার উৎসাহ পাওয়া। যাকে দেখেই বুঝতে শিখেছি- ইসলাম কোন নাম সর্বস্ব ধর্ম নয়। যার হাত ধরে ডুব দিয়েছি ইসলামের গভীর থেকে গভীরে। কুড়িয়ে পেয়েছি এক সাগর সমান মণি-মুক্তো! এক পৃথিবী সমান আলো!
সেদিনের সেই লিকলিকে লোকটা, যাকে দেখার জন্য একটা চায়ের দোকানে ভিড় জমিয়েছিলো অনেকগুলো উৎসুক চোখ- সেই মানুষটা অন্য অনেকগুলো মানুষের মতো আমার মতোন এক নগন্যরও হিদায়াতের মাধ্যম। উসিলা। সেই শার্ট-প্যান্ট পরা লিকলিকে ভদ্রলোকটাকেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা বেছে নিয়েছিলেন আমার হিদায়াতের জন্য। অন্য অনেক মানুষের মতো- আমার দোয়াতেও এই মানুষটা আজীবন থাকবে। আমার সালাতে, আমার দোয়ায়, আমার তাহাজ্জুদে- সর্বদা স্মরণ থাকবে একটা নাম। জাকির নায়েক। আমার গুরু। আমার চলার পথের প্রথম আলোর মশাল।
নির্জলা সত্য বলায় অকপট এই মানুষটা আজ অনেকটা বাস্তুহীন। পুরো পৃথিবীই আজ তার প্রতি বৈরি। সত্যের জন্য লড়াই করা এক নির্ভিক, অসীম সাহসী এই যোদ্ধা আজ সবখানে যেন অবাঞ্চিত৷ সত্যনিষ্ঠ বান্দাদের জন্য আল্লাহর পরীক্ষাগুলো তো এমনই। সত্য কখনো পরীক্ষা না দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সত্য কখনো আঘাত না পেয়ে বিজয়ী হয়নি। সত্য কোনোদিন ত্যাগ আর বিসর্জন ছাড়া আপন মহিমায় জ্বলে উঠেনি৷ পৃথিবীতে সত্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি নজির আছে।
মিথ্যার দাপট সবসময় ঝলকময়, রঙিন আর আপাতঃ অপরাজেয় বলে মনে হয়৷ কিন্তু, ইতিহাস সাক্ষী! সত্য কখনোই পরাজিত হয়নি। সত্য অমোঘ! সত্য অনির্বাণ! বরং, কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে মিথ্যা আর তার ধারক বাহকেরা। হারিয়ে গেছে ফেরাউন-নমরূদ এবং আবু জাহেল!
যুগের হে মহাবীর! পৃথিবীর কোন এক প্রান্ত থেকে আমার বুক ভরা ভালোবাসা, হৃদয় ঝরা দোয়া আর অন্তর নিসৃত শ্রদ্ধা জানবেন। আল্লাহ আপনাকে বিজয় দান করুন। দুনিয়ায় এবং অনন্ত আখিরাতে....
যদ্যপি আমার গুরু...
Reviewed by bd
on
03:51
Rating:
jajal allah khairan
ReplyDelete