এলোমেলো ভাবনাঃ আরিফ আজাদ



ছেলেটা শান্তশিষ্ট হয়ে বসে আছে মেয়ের বাবার সামনে। মেয়ের বাবা কয়েকবার গলা খাঁকারি দিলেন। বললেন,- 'পড়াশুনা কী শেষ, বাবা?'
- 'জ্বী। গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিট...'
- 'আলহামদুলিল্লাহ্‌। এখন কী করো?'
- 'ছোট একটা চাকুরি করি।'
- 'আলহামদুলিল্লাহ্‌। আলহামদুলিল্লাহ্‌।'
মেয়ের বাবা রাজি হলেন। ছেলেটার সাথে তিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিবেন। মেয়েও রাজি।
ছেলেটার আহামরি টাকা পয়সা নেই। ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি নেই। তবে, ছেলেটা দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করে। নিজের জীবনে দ্বীনকে বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ের কিছুদিন পরঃ
স্বামী-স্ত্রী দু'জনে খেতে বসেছে। ছেলেটা তার লাইফ পার্টনারকে জিজ্ঞেস করলো,- 'আচ্ছা শোন, বিয়ের আগে তুমি কী কী বই পড়েছো?'
মেয়েটা বললো,- 'হু......ম....ম.....ম , আমি পড়েছি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ।'
- 'কে লিখেছে?'
- 'আরিফ আজাদ'
- 'কেমন লিখে?'
মেয়েটা খুউউউব আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,- 'ভালো। আপনি পড়েছেন এটা?'
- 'হুম'
- 'আপনার কেমন লেগেছে?'
- 'ভাল্লাগেনি।'
এটা শুনেই মেয়েটার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তার প্রিয় লেখকের সম্পর্কে সে এমন মন্তব্য শুনতে প্রস্তুত ছিলো না। তাও এমন কারো কাছ থেকে যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
ছেলেটা খেয়াল করলো, মেয়েটার মুখ ভারি। গুরুগম্ভীর। মনে হচ্ছে, জগতের সকলকিছু স্থবির হয়ে আছে। সকল চাঞ্চল্য থেমে গেছে।
ছেলেটা ড্রয়ার খুলে একটা প্যাকেট বের করলো। সাদা আর্ট পেপারে মোড়ানো।
ছেলেটা প্যাকেটটি মেয়েটার হাতে দিলো। মেয়েটার তখনও মন খারাপ।
ছেলেটা বললো,- 'খুলো...'
- 'পরে খুলবো....'
ছেলেটা শাসনের সুরে বললো,- 'আরে! এক্ষুণি খুলো...'
মেয়েটার মন আরো খারাপ হয়ে গেলো। পারলে এক্ষুণি কান্না করে বসে এমন অবস্থা।
এত্তো মন খারাপ নিয়ে মেয়েটা প্যাকেটটি খুললো। প্যাকেটে একটি বই। বইটির নাম- প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ।
বইটা দেখেই মেয়েটির মন ভালো হয়ে গেলো।
সে দ্রুত প্রথম পাতা উল্টালো। সে দেখলো, প্রথম পাতাতেই বড় বড় অক্ষরে লেখা-
'তুমি কেবল আমার স্ত্রী নও, আমার অর্ধেক দ্বীন। আমি তোমাকে ভালোবাসি....'
নিচে 'আরিফ আজাদ' লেখা অটোগ্রাফ।
মেয়েটা এক অবাক করা দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকালো। ছেলেটা বললো,- 'Yes. It's me. Arif Azad. The guy who was born for you....'
মেয়েটা একবার বইয়ের অটোগ্রাফের দিকে তাকায়, একবার ছেলেটার দিকে। আবার বইয়ের দিকে, আবার ছেলেটার দিকে....... মেয়েটা জানতো, তার লাইফ পার্টনারের নামটা তার প্রিয় লেখকের নামের সাথে মিল ছিলো। কিন্তু, কিন্তু...........!!
একসময় মেয়েটা কান্না শুরু করে। কান্নার মাঝে মেয়েটা আবার হাসতেও শুরু করলো। কান্না-হাসি মিশ্রিত এই মূহুর্তটিই মনে হচ্ছে মেয়েটার জীবনের সেরা মূহুর্ত। এই মূহুর্তটা নৈসর্গিক।
এলোমেলো ভাবনাঃ আরিফ আজাদ এলোমেলো ভাবনাঃ আরিফ আজাদ Reviewed by bd on 05:16 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.