রামাদান - আরিফ আজাদ



দেখতে দেখতেই চলে এলো রামাদান মাস। মহান এই মাসের ফযিলত যে কতোটা উঁচুতে তা আসলে বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। কেবলমাত্র দুটো হাদিস বলে আমি এই মাসের গুরুত্বটা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
হাদিসে কুদসির একটা হাদিস থেকে জানা যায়, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা বলেন, ‘আদম সন্তানের সকল নেক আমল তার নিজের জন্য, কেবলমাত্র সিয়াম ছাড়া। সিয়াম হলো আমার জন্য আর আমি নিজেই সিয়ামের প্রতিদান দেবো’।
খেয়াল করলে বুঝবেন, এই হাদিসে সিয়ামকে ইবাদাত হিশেবে এক অনন্য মর্যাদা, অনন্য স্থান দান করা হয়েছে। এমনকি, সালাতের ব্যাপারেও আল্লাহ কোন জায়গায় এভাবে বলেননি। উনি বলেছেন আদম সন্তান অন্য যা ইবাদাত করে, যেমন- সালাত, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সবকিছুই তার নিজের জন্যই করে। কিন্তু বান্দার সিয়াম হয় কেবল আল্লাহর জন্য। আর এই সিয়ামের প্রতিদান তিনি নিজ হাতেই প্রদান করবেন। অন্য কোন আমলের পুরস্কার তিনি এভাবে প্রদান করবেন মর্মে কোনোকিছু পাওয়া যায়না। কেবলমাত্র সিয়াম ছাড়া। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে, রামাদান মাস এক অনন্য উচ্চতার, অনন্য মর্যাদার মাস।
দ্বিতীয়ত, জান্নাতের কয়েকটি দরজার মধ্যে একটি দরজার নাম হলো ‘আর-রাইয়্যান’। এই দরজা দিয়ে কেবলমাত্র সিয়াম পালনকারীরাই প্রবেশ করতে পারবে। তারা ব্যতীত আর কেউই এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা। এমনকি, নিয়মিত তাজাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তি, নিয়মিত দান-সাদাকাকারী ব্যক্তিও এই দরজা দিয়ে ঢুকতে পারবেনা।
সিয়াম ব্যতীত আর এমন কোন নির্দিষ্ট ইবাদাতের ব্যাপারে আমরা জানতে পারিনা যেখানে ওই নির্দিষ্ট ইবাদাতের জন্য জান্নাতে আলাদা একটি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। সুবহানআল্লাহ!
রামাদান তো চলেই এসেছে আমাদের দোরগোড়ায়। আমরা কি সিয়াম সাধনার মাসটা কিভাবে সত্যিকার সাধনার মধ্য দিয়ে পালন করবো তা কি এখনো ঠিক করেছি? যদি না করে থাকি তাহলে এখনই শুরু করে দিন। যেকোন ব্যবসা শুরু করার আগে আমরা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করি। প্রজেক্ট প্ল্যান দাঁড় করাই। রামাদান মাসও কিন্তু উত্তম একটা ব্যবসার মাস। এই মাসে বান্দা ব্যবসা করে আল্লাহর সাথে। আর, আল্লাহর সাথে যে ব্যবসা, কতোই না উত্তম সেটি! সেই ব্যবসার নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য থাকবেনা, কোন প্রজেক্ট প্ল্যান থাকবেনা- তা কি করে হয়? চলুন দেখা যাক কিভাবে আমরা আমাদের রামাদানটাকে একটা ‘মধুর রামাদান’ হিশেবে কাটাতে পারি, ইন শা আল্লাহ।
শুরুর আগেঃ
আপনি নিশ্চয় ঠিক করে রেখেছেন যে, আসন্ন রামাদানের সময়গুলোকে একেবারে ‘টপ টু বটম’ কাজে লাগাবেন, তাইনা? সারাক্ষণ হয় সালাতে থাকবেন, নাহয় কুরআন তিলাওয়াতে, অথবা যিকিরে, এইতো? আপনার এই আগ্রহ এবং ইচ্ছাকে মন থেকে স্বাগত জানাই। কিন্তু, সেই সাথে বলি- এক্ষুণি এই চিন্তা মন থেকে ঝেঁড়ে ফেলে দিন। কারণ- এভাবে আপনি আসলে আপনার রামাদান কাটাতে পারবেন না। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে একেবারে ইবাদাতে মশগুল হয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব না। কারণ- দুনিয়াকে আপনি ছাড়তে চাইলেও দুনিয়া কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দেবেনা। আপনি অফিস না করে পারবেন? পরীক্ষা না দিয়ে পারবেন? বাজার না করে পারবেন? হসপিটালে না গিয়ে পারবেন? বাচ্চার অসুস্থতায় দৌঁড়ঝাপ না করে পারবেন?
এর কোনোটাই আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এড়িয়ে যাওয়া যৌক্তিকও না। আপনাকে এগুলো সামলে চলতে হবে। এবং একইসাথে রামাদানকেও সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু, আপনি যদি গোঁ ধরে বসে থাকেন যে আপনি এই মাসে আর কিছুই করবেন না কেবল ইবাদাত ছাড়া, তাহলে রামাদানের প্রথম সপ্তাহেই আপনি হাঁপিয়ে উঠবেন এবং বাকি তিন সপ্তাহের ইবাদাতগুলোও মাটি করবেন। তাই, রামাদান নিয়ে এমন কোন প্ল্যান-প্রোগ্রাম করবেন না যা আপনার জন্য বাড়তি ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করতেও আল্লাহ আপনাকে বলেননি। তিনি আপনাকে ততোটুকুই করতে বলেছেন যতোটুকু করতে আপনি সমর্থ। কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না’- সূরা আল বাকারা ২৮৬।
তাই, রামাদান নিয়ে যদি ‘অসম্ভব’ কিছু প্ল্যান করে রাখেন, তা এই মুহূর্তে মন থেকে ঝেঁড়ে ফেলে দিন। নতুন করে ভাবুন আপনার প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিভাবে রামাদানের সময়গুলো সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।
ফরযের ফরয্যিয়্যাতঃ
‘ফরয’ মানে হলো অবশ্য পালনীয়। অবশ্য পালনীয় বলতে বোঝায় যা আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আমাদের জন্য ফরয করেছেন। রামাদানের বাইরেও এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আমাদের জন্য যেমন ফরয, রামাদানেও তেমনি। তাই, খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন এক ওয়াক্ত ফরয সালাতও না ছুটে যায়। যদি ছুটে যায়, তাহলে কিন্তু সব প্ল্যান-প্রোগ্রাম-প্রজেক্ট অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। ফরয সালাতগুলো অবশ্যই জামাতের সাথে হতে হবে। যদি কোনোভাবে জামাত ছুটে যায়, মাথায় রাখতে হবে যেন ওয়াক্ত শেষ হয়ে না যায়। ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবার আগেই সেটা আদায় করে নিতে হবে।
ভাগ করে নিন সময়টুকুঃ
আগেই বলেছি, সারাদিন আর সারারাত ইবাদাত করার প্ল্যান নিয়ে আগালে আপনি খুব বেশিদূর আগাতে পারবেন না। এটা কিন্তু পরীক্ষিত সত্য। তাই, আপনার সময়গুলোকে ভাগ করে নিন। আপনার অফিসের সময়, ক্লাসের সময় আর কাজের সময়ের বাইরে কি পরিমাণ সময় হাতে আছে তা নির্দিষ্ট করুন। ধরা যাক এসবের বাইরে আপনার হাতে সময় আছে তিন ঘন্টা। মানে, ক্লাস, অফিস আর কাজের হিশেব বাদ দিয়ে আপনার হাতে তিন ঘন্টার মতোন সময় থাকে রামাদানে বাড়তি ইবাদাত করার জন্য।
এখন, এই তিন ঘন্টাকেই সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে রামাদানে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে নিতে হবে। কিভাবে? ফরয সালাতগুলো আপনি রামাদানের বাইরেও পড়তেন, রামাদানের ভিতরেও পড়বেন। তাই, ফরয সালাতের জন্য আলাদাভাবে সময় নির্ধারণের দরকার নেই। এটা তো আমাদের প্রাত্যহিক রুটিনেরই অংশ। ফরয সালাতের সাথে সাথে যে সুন্নত এবং নফল সালাত আছে, সেগুলোও আমরা কিন্তু কম-বেশি সকলেই পড়ি বা পড়ার চেষ্টা করি। তাই, এগুলোর জন্য বাড়তি সময় নির্ধারণেরও দরকার নেই। এগুলোও প্রাত্যহিক রুটিনের অংশে পড়ে যায়। বাকি থাকে সালাতের পরের যিকিরগুলো, তাইনা? ফরয সালাতের পরে আমরা চেষ্টা করতে পারি সুন্নাহ সম্মত যিকিরগুলো করে নিতে।
এই যিকিরগুলোর জন্য আমরা ‘হিসনুল মুসলিম’ নামের ছোট্ট বই কিংবা এনড্রয়েড অ্যাপটা ফোনে রাখতে পারি। এই যিকিরগুলো যে মসজিদে বসে করতে হবে, তা নয়। এগুলো আমরা হাঁটার সময়, অফিসের ডেস্কে, গাড়িতে বসেও করতে পারি। তবে শর্ত হলো- মনোযোগ দিয়ে করা। কি বলছি তা বোঝার চেষ্টা করা। তাহলে, ফরয সালাত, ফরয সালাতের আগের-পরের সুন্নত-নফলের জন্য এবং এসবের পরের যিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করে সময় বের করার দরকার নেই। রামাদান আগেও এগুলো আমরা করতাম, রামাদানের মধ্যেও করবো, ইন শা আল্লাহ।
তাহলে, বাড়তি তিন ঘন্টা যে বের করলাম, তা দিয়ে কি করবো? হ্যাঁ। এই সময়গুলো হবে আমার জন্য বাড়তি বিনিয়োগ। এই তিন ঘন্টার এক ঘন্টা আমি কুরআন তিলাওয়াতে কাটাতে পারি। অথবা, আধ ঘন্টা কুরআন তিলাওয়াত আর আধ ঘন্টা উক্ত আয়াতগুলোর অর্থ, শানে নুযূল এবং তাফসীর পড়ে কাটাতে পারি। এভাবে যদি প্রতিদিন আমি অন্তত বিশ আয়াত করেও পড়তে পারি, তাহলে এক মাসে, মানে পুরো রামাদান মাস শেষে আমি ৬০০ টি আয়াত তিলাওয়াত করা শেষ করবো অর্থ, শানে নুযূল এবং তাফসীর সহ। এটা একেবারে খুবই মিনিমাম হিশেব। আপনি চাইলে এখানে আরো আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা বাড়িয়েও নিতে পারেন। অসুবিধে নেই। তবে, আমাদের হিশেবের জন্য এটা ধরেই আগানো যাক।
প্রথম ঘন্টা পার হলো। দ্বিতীয় ঘন্টা কিভাবে কাটাবো তাহলে? এই এক ঘন্টা পুরোটাই তাহাজ্জুদে সময় দেন। অর্থাৎ, এই এক ঘন্টার পুরোটা আপনি তাহাজ্জুদ পড়েই কাটাবেন। উহু, এক নাগাড়ে নয়। দুই রাক’আত করে করে আগাবেন। প্রতি দুই রাক’আতের পর পাঁচ থেকে দশ মিনিট বিরতি। সেই বিরতিতে দরূদ পাঠ, যিকির-আযকার এবং মুনাজাতে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে নিতে পারেন। আপনার মনের যতো আশা-আকাঙ্খা, যতো বাসনা তার সবটাই আল্লাহকে খুলে বলে ফেলুন নিশ্চিন্তে। তিনি আপনার অভিযোগ, অনুযোগ, আবদার সবকিছু শুনতে পছন্দ করেন।
তৃতীয় ঘন্টা কাটাতে পারেন হালাকায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হালাকার আয়োজন করতে পারেন। সেই হালাকায় বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। রিয়াদুস সালেহীন থেকে টপিক ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ শোনাতে পারেন সবাইকে। সম্ভব হলে ব্যাখ্যাও। এই হালাকায় সালাতের গুরুত্ব, রামাদানের গুরুত্ব, যাকাত-ফিতরার গুরুত্ব, রিয়া, গীবত, চোগলখুরির এবং মিথ্যা বলার পরিণাম ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। নিজে যদি না পারেন, তাহলে ইউটিউব থেকে শাইখদের এসব বিষয়ে ভালো ভালো লেকচারগুলো প্লে করে সবাই মিলে শুনতে পারেন।
এভাবে আপনার বাসায় হালাকার একটা পরিবেশ গড়ে উঠবে রামাদানের উসিলায়, এবং আল্লাহ তাওফিক দিলে সেটা রামাদানের পরও চলতে থাকবে, ইন শা আল্লাহ। বাড়তি তিনটি ঘন্টাকে এভাবেই আপনি রামাদানে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে পারেন, ইন শা আল্লাহ।
রামাদানের একদিনঃ
এখানে রামাদানের একদিন কিভাবে কাটানো যায় সেটা উল্লেখ করছি। এটাকে মডেল ধরে আপনি পুরো রামাদানটাই এভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন, ইন শা আল্লাহ।
একেবারে প্রথম রামাদানটা আপনি শুরু হবে তারাবীহর সালাত দিয়ে। মানে, যেদিন চাঁদ দেখা যাবে সেদিন ইশার পরে তারাবীহর সালাতের মাধ্যমে রামাদান যাত্রা করে। সেদিন আপনি ইশার পরে তারাবীহ পড়লেন। তারাবীহ পড়ে এসে খুব ভারি কিছু খাবেন না। হালকা জুস বা পানীয় জাতীয় কিছু খেয়ে শুয়ে পড়তে পারেন। এলার্ম দিয়ে রাখুন রাত দুটো বা আড়াইটার। উহু, নো মোর ফেইসবুকিং! জাস্ট ঘুম!
ঘুম থেকে দুটো বা আড়াইটার দিকে জেগে ফ্রেশ হয়ে অযূ করে সালাতে দাঁড়াবেন। চার-ছয় রাক’আত কিয়ামুল লাইল পড়ুন। উপরের হিশেবে একঘন্টা সময় কিয়ামুল লাইলে ব্যয় করতে পারেন। তবে, আপনার সুবিধে অনুযায়ী এই হিশেব বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে। যাহোক, এরপর কুরআন পড়তে বসে যান। কিছুক্ষণ কুরআন পড়ে সেহেরির জন্য উঠে পড়ুন। সেহেরি একটু দেরি করে খাওয়াই সুন্নাহ। এতে বারাকাহ থাকে বেশি।
সেহেরী খেয়ে যদি সময় থাকে বাসায় দুই রাক’আত তাহিয়্যাতুল অযূর সালাত পড়ে নিন। এটা খুব চমৎকার একটা সুন্নাহ। তাহিয়্যাতুল অযূ মানে অযূর সালাত। তাহিয়্যাতুল অযূ আদায়কারীর জন্যে জান্নাতে একটি ঘরের নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। যাহোক, এরপর মসজিদে চলে যান। হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে আগে দুই রাক’আত দুখুদুল মাসজিদ তথা মসজিদে প্রবেশের সালাত পড়ে নিন। এরপর ফরযের আগের দুই রাক’আত সুন্নাত আদায় করে ফেলুন ধীরেসুস্থে। মনে রাখতে হবে, জামাতের জন্য হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে দুখুদুল মাসজিদ এবং ফযরের সুন্নাতের মধ্যে ফযরের সুন্নাত সালাত প্রাধান্য পাবে। কারণ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফযরের দুই রাক’আত সুন্নত আসমান এবং যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে, সেসবকিছু থেকে উত্তম’।
ফযরের সালাত আদায় করে প্রাথমিক যিকির-আযকারগুলো শেষ করতে পারেন। এরপর, হালকা কুরআন তিলাওয়াত করা যায়। সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করুন। অপেক্ষার সময়টুকুতে কুরআন তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে পারেন। এরপর, সূর্যোদয়ের আনুমানিক দশ থেকে পনেরো মিনিট পরে ইশরাকের সময় শুরু হয়। এই সময়টুকুতে আপনি দুই রাক’আত ইশরাকের সালাত আদায় করে বাসায় চলে আসতে পারেন। অবশ্য, বাসায় এসেও ইশরাকের সালাত পড়া যাবে। কোন সমস্যা নেই তাতে।
এরপর আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজে লেগে গেলেন। অফিস, ক্লাস, কাজ বা অন্যান্য। মাঝের সময়গুলোতে কিন্তু কোনোভাবেই যোহর আর আসরের সালাত মিস করা যাবেনা। এর মধ্যে যদি ফ্রি সময় পান, সেগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত শোনা, বিভিন্ন ইসলামি লেকচার শুনে কাটাতে পারেন। ফেইসবুক স্ক্রলিং না করাই উত্তম।
ইফতারের আগের সময়টুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তাই এই সময়টুকু ঘুমিয়ে বা ফেইসবুকিং করে না কাটিয়ে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার পাঠ করুন। এটাই উত্তম। ইফতারে ভরপেট খাওয়ার দরকার নেই। বিশেষ করে এমনভাবে খাবেন না যাতে মাগরিব সালাত, ইশা এবং তারাবীহর সালাতে আপনার উপর আলসেমি ভর করে। অল্প খান, কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খান। পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলমূল বেশি খান।
ইফতার এবং মাগরিবের সালাতের পরের সময়টুকু রেস্ট করতে পারেন। তবে, ঘুমাবেন না কিন্তু। তাহলে ইশা আর তারাবীহ গোল্লায় যাওয়ার আশঙ্কা আছে। শুয়ে শুয়ে বই পড়তে পারেন কিংবা বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে পারেন। তাদের পড়াতে পারেন।
এরপর ইশা, তারাবীহ...এবং বাকিটা আবার আগের মতোই...
রামাদানে যা করবেন নাঃ
১। আমাদের অনেকের কাছে রামাদানটা কেবল ‘না খেয়ে থাকা’র মতো। অর্থাৎ, উপোস থাকাই যেন রামাদান। তাই, দিনের বেলা ঘুমিয়ে আমরা দিনটাকে বিদেয় করে দিতে চাই। সেহেরী খেয়ে ফযরের পরে ঘুম, যোহরের সময় ওঠা। এরপর যোহর পড়ে ঘুম, আসরের সময় ওঠা। আসর পড়ে ঘুম, একেবারে মাগরিবের সময় ওঠা। একদমই না। এরকম একেবারেই করা যাবেনা। তাহলে রামাদানের আসল উদ্দেশ্য এবং বারাকাহটাই আপনি মিস করে ফেলবেন। রামাদান কোন বোঝা নয় যে পেটের খিদের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পুরোদিন ঘুমুতে হবে।
২। কাজ না থাকলে দিনের সময়গুলো অলস কাটাবেন না। কুরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ণ, বিভিন্ন ভালো ইসলামি বইপত্র পড়ে সময় পার করুন। তাফসীর পড়ুন। সীরাহ পড়ুন।
৩। টিভি দেখা বন্ধ করতে পারলে খুব ভালো হয়। যতো ভালো অনুষ্ঠানই হোক, না দেখে থাকতে পারলে উত্তম। অনুষ্ঠান ভালো, কিন্তু বিজ্ঞাপনগুলো তো যাচ্ছেতাই।
৪। ফেইসবুক না চালিয়ে পারলে তো খুবই ভালো। ফেইসবুকই আপনার রামাদানের বেশিরভাগ সময় নিয়ে নিবে, গ্যারান্টেড। তাই, এই সময়টুকু ফেইসবুক থেকে দূরে থাকাটাই নিরাপদ। তবে, একেবারে সম্ভব না হলে যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন।
৫। অনর্থক কথাবার্তা এড়িয়ে চলুন। সিয়াম শুধু না খেয়ে থাকার নাম নয়। জিহ্বারও সিয়াম আছে। জিহ্বার সিয়াম হলো সে অনর্থক-অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থাকবে। চোখের সিয়াম হলো সে অশ্লীল জিনিস দেখা বন্ধ করবে। কানের সিয়াম হলো সে অশ্লীল, খারাপ জিনিস শোনা থেকে বিরত থাকবে।
৬। ইফতার পার্টি নামের আল্ট্রা মডার্ণ জিনিসগুলো এড়িয়ে চলুন। রামাদান এরকম পার্টি করে বেড়ানোর নাম নয়।
৭। নিজের মা-বোন বা স্ত্রীর ওপরে চাপ কমান। রামাদানে দুপুরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত তাদের দিয়ে বাহারি পদের সুস্বাদু খাবার রান্নার ঝামেলা তাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। তাদেরও তো ইবাদাত করার দরকার আছে, তাইনা? তাছাড়া, রামাদান মানে তো আচ্ছামতোন খাওয়া নয়।
৮। রামাদানের শেষ দশ দিন শপিং, ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। এই শেশজ দশ দিন পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর অণ্বেষণ করুন যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পেয়েছেন তো জিতেছেন।
৯। সারারাত জাগবেন না। শরীরকে একটু বিশ্রাম দিবেন। তাহাহুড়ো করে একরাতে সব করতে গিয়ে অন্য রাতগুলো মিস করবেন না। কম ইবাদাত করুন, তবুও ধীরেসুস্থে, ধারাবাহিকভাবে করুন।
১০। সিম্পল ঈদ উদযাপন করুন। কাপড়চোপড়ের পেছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করবেন না। যাকাতগুলো পরিশোধ করুন। ফিতরাগুলো পরিশোধ করুন। সাদাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
আমাদের সকলের রামাদান সুন্দর কাটুক, সুস্থতায় কাটুক, এই প্রত্যাশা। আমরা যেন রামাদানকে ঠিক সেভাবে পালন করতে পারি, যেভাবে পালন করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা খুশি হবেন। যেভাবে পালন করলে আমরা আমাদের গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারবো। ইন শা আল্লাহ। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাবিল্লাহ।
রামাদান - আরিফ আজাদ রামাদান - আরিফ আজাদ Reviewed by bd on 03:46 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.